ঢাকা,রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বদরখালী সমিতির বহুল প্রতিক্ষিত নির্বাচন আজ: ভোটযুদ্ধে ৩৪ প্রার্থী

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদের বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির বহুল প্রতিক্ষিত ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে তিনজন, সহ-সভাপতি পদে দুইজন, সম্পাদক পদে তিনজন ও পরিচালক পদে ২৬জন সহ মোট ৩৪জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে রয়েছেন। তবে শেষ মুর্হুতে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িঁয়েছেন সম্পাদক পদে আনাসর প্রতীকের প্রার্থী সমিতির বর্তমান সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন। বৃহস্পতিবার বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে সকল প্রার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত উন্মুর্থ মতবিনিময় সভায় সম্পাদক প্রার্থী খান জয়নাল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেন।

সরজমিনে নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনা ও টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার প্রতিযোগিতা এবং প্রার্থীদের কাছে ভোটারদের কদর দেখে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির এই নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে। বদরখালী সমিতির আশপাশ এলাকা থেকে শুরু করে পুরো ইউনিয়নজুড়ে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই প্রার্থীদের রঙিন নির্বাচনী পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, তোরণে চেয়ে গেছে। এতসব আয়োজনের মধ্যেও প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের মন জয়ের জন্য প্রচার গাড়িতে মাইক বেঁেধ দিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় গান রচনা করে পাড়ায় পাড়ায় প্রচারনা চালাচ্ছেন। এতেই পুরো বদরখালী নির্বাচনী জ্বরে কাপছে। ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর ভাগ্যন্নোয়নের অন্যতম আলোর আলো বদরখালী সমিতি। এ কারনে সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে সভ্য-পোষ্যদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মাঝে রীতিমত উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

বদরখালী সমিতির এবারের নির্বাচনে ১২টি পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সর্বমোট ৩৪ জন প্রার্থী। এসব প্রার্থীর মধ্য থেকে ১২টি পদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৫০০ (সভ্য) ভোটার। সমিতির এ নির্বাচনে সদস্য পদ ছাড়াও সম্পাদকীয় পদে যারা নির্বাচন করছেন তারা হলেন সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার (চেয়ার), সাবেক চারবারের সম্পাদক দেলোয়ার হোছাইন এমএ (গোলাপফুল) ও সাবেক সহ-সভাপতি মাস্টার শাহাব উদ্দিন। সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সহ-সভাপতি আলী মোহাম্মদ কাজল (বাই সাইকেল) ও আনছারুল করিম (মই)।

সম্পাদক পদে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন সাবেক দু’বারের সম্পাদক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী (দেয়ালঘড়ি) ও নুরুল আমিন জনি (চাকা)। এছাড়াও সমিতির ৯টি সদস্য (পরিচালক) পদে ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সমবায় আইনে আচরণবিধি লঙ্গণে যতেষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নির্বাচনে কয়েকজন বিত্তশালী প্রার্থী টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। বিশেষ করে সভাপতি ও সম্পাদক পদের কয়েক প্রার্থী নির্বাচনী কৌশল হিসেবে ভোট কিনছেন। ইতিমধ্যে কোন কোন প্রার্থী সর্বনিন্ম ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গোপনে সভ্যদের মাঝে বিলি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক প্রার্থীরা।

সমিতির একাধিক ভোটার দাবি করেন, নির্বাচন আসলে তিনবছর পর পর আমাদের (ভোটার) মূল্যায়ন হয়। এবারও সভাপতি ও সম্পাদক পদের কয়েকজন প্রার্থী একটি ভোটের বিপরীতে সর্বনিন্ম ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিলি করেছেন।’

সভাপতি ও সম্পাদক পদের কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তাদের পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকা দুইজন প্রার্থী বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ভোটারদের কাছে টাকা বিলি শুরু করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই প্রার্থীরা ইউনিয়নের এক নম্বর ব্লকের তেচ্ছাপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া ও শহরিয়া পাড়া, সাতডালিয়া পাড়া, ভেরুয়াখালী পাড়া, নতুন ঘোনা, কুতুবনগরসহ বিভিন্ন পাড়ার সভ্যদের কাছে মোটা অংকের টাকা বিলি করেছেন। বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কালোটাকা বিতরণকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

সভাপতি পদে এক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হাজি নুরুল আলম সিকদার তার নির্বাচনী কার্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত সভ্যরা টোকেন দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বলে সচেতন ভোটার ও প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। তবে, সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হাজি নুরুল আলম সিকদার সভ্যদের টাকা বিতরণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে এটি অপপ্রচার বলে তিনি জানান।

সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, সমিতির সভ্যদের বিপুল ভোটে বিগত দুই বার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। তৎসময়ের মধ্যে দায়িত্বে থাকাবস্থায় আমি চেষ্টা করেছি সমিতির সভ্যদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে। সমিতির কোন কর্মকান্ডে সভ্য বা ভোটারেরা হয়রানী হয়েছেন তেমন কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলাম না। অতীতে যে সব সুযোগ-সুবিধা সমিতির সভ্য (ভোটারেরা) আমার কাছ থেকে পেয়েছেন, বিনিময়ে এবারের নির্বাচনেও আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করি।’

জানতে চাইলে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘কোন পদের কোন প্রার্থী টাকা বিলি করছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারও। বদরখালী কলোনিজেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৯টি বুথে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলছে ভোটগ্রহন। ##

পাঠকের মতামত: